সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক | Political Science Notes in Bengali

Ad Code

সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক | Political Science Notes in Bengali

 

University of Burdwan

1st Semester Minor Political Science Notes

Paper: Political Theory

সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে সহজ ভাষায়। Political Science বাংলা নোটস, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার জন্য উপযোগী।, সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক, সাম্য ও স্বাধীনতা, Political Science Bengali Notes, সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নোটস বাংলা, BA Political Science Notes, Semester Exam Political Science, Equality and Liberty Relationship, Indian Political Thought Bengali, সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক রচনা, সাম্য ও স্বাধীনতা প্রশ্ন উত্তর, Political Science Bengali Essay, Equality and Liberty in Bengali, সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক কী?, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কেন অসম্পূর্ণ?, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কেন অসম্পূর্ণ?, স্বাধীনতা ছাড়া সাম্য কীভাবে বিকৃত হয়?, গণতন্ত্রে সাম্য ও স্বাধীনতার ভূমিকা কী?, পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ লাইন লেখো।

৩) সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো
উত্তর;

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কঃ

সাম্য ও স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত । বস্তুত সাম্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা হয় না, তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া সাম্যও অসম্পূর্ণ। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাম্যের দাবির বহু আগে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি ওঠেছিল। তাই  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের বিষয়টিকে আলোচনা করা যেতে পারে।  সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক নীচে আলোচনা করা হল-


 i) সাম্য স্বাধীনতার বাস্তব ভিত্তি গঠন করে: 

    স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে যখন সমাজে সাম্য বিদ্যমান থাকে। যদি সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক বৈষম্য থাকে, তবে স্বাধীনতা কেবল সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির মানুষ তখন মতপ্রকাশ, শিক্ষা বা সুযোগের অধিকার ভোগ করতে পারে না। সাম্য সকল নাগরিককে সমান সুযোগ প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতার বাস্তব ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। তাই বলা যায়, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কেবল তাত্ত্বিক ধারণা মাত্র, বাস্তব জীবনে এর কার্যকারিতা সীমিত থাকে


ii) স্বাধীনতা সাম্যকে প্রাণবন্ত ও গ্রহণযোগ্য করে তোলে: 

    সাম্য তখনই টেকসই ও মানবিক হয়, যখন তা স্বাধীনতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। জোরপূর্বক আরোপিত সাম্য মানুষের সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে দমিয়ে দেয়। স্বাধীন মতপ্রকাশ, চিন্তার স্বাধীনতা ও পেশা নির্বাচনের অধিকার না থাকলে সাম্য একঘেয়ে ও কর্তৃত্ববাদী রূপ ধারণ করে। স্বাধীনতা মানুষকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় এবং সেই সঙ্গে সামাজিক সাম্যের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে। ফলে স্বাধীনতা ছাড়া সাম্য স্থবির ও অকার্যকর হয়ে পড়ে


iii) একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটি বিকৃত হয়:

    সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক। একটির অভাবে অন্যটির স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব নয়। স্বাধীনতা ছাড়া সাম্য স্বৈরতান্ত্রিক রূপ নেয়, যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা দমিত হয়। আবার সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা শক্তিশালীদের একচেটিয়া অধিকারে পরিণত হয়, যা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি করে। ইতিহাসে দেখা যায়, যেখানে স্বাধীনতা সীমাহীন হয়েছে সেখানে শোষণ বেড়েছে, আর যেখানে সাম্য জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে মানবাধিকারের অবক্ষয় ঘটেছে। তাই উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য অপরিহার্য


iv) গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাম্য ও স্বাধীনতার সমন্বয় অপরিহার্য: 

    গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো সাম্য ও স্বাধীনতার সমন্বিত প্রয়োগ। নাগরিকদের মতপ্রকাশ, সংগঠন গঠন ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের স্বাধীনতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। একই সঙ্গে আইনের দৃষ্টিতে সমতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতা নাগরিককে সচেতন করে এবং সাম্য তাকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার সুযোগ দেয়। এই দুটির সমন্বয়ই একটি কার্যকর ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রধান শর্ত


v) সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সাম্য ও স্বাধীনতার যৌথ ভূমিকা: 

    সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়ই অপরিহার্য। স্বাধীনতা মানুষকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, আর সাম্য সেই অধিকার বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তায় সমান সুযোগ না থাকলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। আবার স্বাধীনতা ছাড়া সাম্য জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণে পরিণত হয়। তাই একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনের জন্য এই দুই ধারণার সমন্বিত প্রয়োগ অপরিহার্য


vi) সাম্য স্বাধীনতাকে সার্বজনীন রূপ দেয়: 

    স্বাধীনতা তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন তা সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য প্রযোজ্য হয়। সাম্য নিশ্চিত না হলে স্বাধীনতা কেবল কিছু বিশেষ শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নারী, সংখ্যালঘু, শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যদি সমান অধিকার ও সুযোগ না পায়, তবে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। সাম্য স্বাধীনতাকে সর্বজনীন করে তোলে এবং সমাজের প্রতিটি মানুষকে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচার সুযোগ দেয়। এভাবেই সাম্য স্বাধীনতাকে ব্যাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গড়ে তোলে


vii) অর্থনৈতিক সাম্য স্বাধীনতার বাস্তব রূপ নিশ্চিত করে: 

    অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে রাজনৈতিক বা সামাজিক স্বাধীনতা বাস্তবে কার্যকর হয় না। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাসকারী মানুষ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অর্থনৈতিক সাম্য মানুষকে মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দেয়, যা স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে তোলে। তাই আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলো আয় বৈষম্য কমিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে স্বাধীনতাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে


viii) সাম্য ও স্বাধীনতার সমন্বয় সামাজিক স্থিতিশীলতা আনে: 

    সমাজে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য অপরিহার্য। অতিরিক্ত স্বাধীনতা সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, আবার অতিরিক্ত সাম্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও উদ্ভাবনকে দমন করে। উভয়ের সঠিক সমন্বয় সামাজিক শান্তি, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহাবস্থান নিশ্চিত করে। ফলে রাষ্ট্রে সংঘাত কমে এবং নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।


উপসংহার;

পরিশেষে বলা যায়, সাম্য ও স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক ও অবিচ্ছেদ্য ধারণা। একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য উভয়ের সুষম সমন্বয় অপরিহার্য। স্বাধীনতা ব্যক্তি বিকাশের পথ খুলে দেয়, আর সাম্য সেই বিকাশকে সবার জন্য নিশ্চিত করে। তাই সাম্যহীন স্বাধীনতা যেমন সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে, তেমনি স্বাধীনতাবিহীন সাম্য মানুষকে করে তোলে নিস্প্রাণ ও পরাধীন। প্রকৃত গণতন্ত্র তখনই সম্ভব, যখন সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের হাত ধরে অগ্রসর হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code