রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব | Idealist Theory of State in Bengali | Political Science Notes

Ad Code

রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব | Idealist Theory of State in Bengali | Political Science Notes

University of Burdwan

1st Semester Minor Political Science Notes

Paper: Political Theory

রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে সহজ ভাষায়। BA Political Science পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলা নোটস।, রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব, Idealist Theory of State, Political Science Notes Bengali, আদর্শবাদী রাষ্ট্রতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বাংলা নোটস, BA Political Science Notes, Idealism Theory of State, রাষ্ট্রের আদর্শবাদী তত্ত্ব আলোচনা, রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব আলোচনা করো, Idealist theory of state in Bengali, Political Science Semester Notes Bengali, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার উত্তর, রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব কী?, আদর্শবাদী তত্ত্বের প্রবক্তা কারা?, আদর্শবাদী তত্ত্বের মূল বক্তব্য কী?, আদর্শবাদী তত্ত্বের প্রধান সমালোচনা কী?, 

 

৪) রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্বটি আলোচনা করো।
উত্তর;

ভূমিকা;

রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। রাষ্ট্র কী, কেন রাষ্ট্রের প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রের প্রকৃতি কেমন—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে। এসব তত্ত্বের মধ্যে আদর্শবাদী তত্ত্ব একটি প্রাচীন ও প্রভাবশালী মতবাদ। এই তত্ত্ব রাষ্ট্রকে কেবল একটি রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং একটি নৈতিক ও আদর্শিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে।

আদর্শবাদী তত্ত্বের মূল বক্তব্য:

আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে কেবল একটি রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক যন্ত্র হিসেবে নয়, বরং একটি নৈতিক ও আদর্শিক সত্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্র মানুষের নৈতিক উৎকর্ষ সাধন ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গঠিত। প্লেটো তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে ন্যায়ভিত্তিক আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা প্রদান করেন, যেখানে দার্শনিক-শাসকরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রকে নৈতিক জীবনের পরিপূর্ণতা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেছেন এবং বলেছেন মানুষ স্বভাবগতভাবেই রাজনৈতিক প্রাণী। হেগেল রাষ্ট্রকে “নৈতিক ভাবের বাস্তব রূপ” হিসেবে অভিহিত করেন এবং মনে করেন রাষ্ট্রের মধ্য দিয়েই ব্যক্তির প্রকৃত স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া টিএইচ গ্রিন ও বোজানকেট রাষ্ট্রকে নৈতিক উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

আদর্শবাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্য;

আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নয়, বরং একটি নৈতিক ও আদর্শিক প্রতিষ্ঠানের রূপে ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-


i) রাষ্ট্র একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান: 

আদর্শবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্র কেবল শাসনযন্ত্র নয়, বরং একটি নৈতিক সত্তা। রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য মানুষের নৈতিক উন্নতি সাধন করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্র মানুষের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নাগরিকদের নৈতিকভাবে উন্নত করে তোলে। তাই রাষ্ট্রকে এখানে নৈতিক মূল্যবোধের ধারক ও বাহক হিসেবে দেখা হয়


ii) রাষ্ট্রের সর্বোচ্চতা ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা: 

এই তত্ত্বে রাষ্ট্রকে সমাজের সর্বোচ্চ ও সর্বশক্তিমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা রাষ্ট্র থেকেই উৎসারিত বলে মনে করা হয়। ব্যক্তির অস্তিত্ব ও বিকাশ রাষ্ট্রের মধ্য দিয়েই সম্ভব—এই ধারণা আদর্শবাদী তত্ত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফলে রাষ্ট্রের স্বার্থকে ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়


iii) ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক ঐক্য:

আদর্শবাদী তত্ত্বে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে পরস্পরবিরোধী নয়, বরং পরিপূরক হিসেবে দেখা হয়। ব্যক্তি রাষ্ট্রের অংশ এবং রাষ্ট্র ব্যক্তির সমষ্টিগত রূপ। ব্যক্তির প্রকৃত স্বাধীনতা রাষ্ট্রের মধ্যেই বাস্তবায়িত হয়। তাই রাষ্ট্রের কল্যাণের মধ্যেই ব্যক্তির কল্যাণ নিহিত—এই ধারণাই এ তত্ত্বের মূল ভিত্তি


iv) নৈতিকতা ও ন্যায়ের উপর গুরুত্ব:

এই তত্ত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও ন্যায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইন প্রণয়ন ও শাসনব্যবস্থার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও মানবকল্যাণ সাধন। রাষ্ট্রের কার্যকলাপ যদি নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত না হয়, তবে তা আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয় না—এটাই আদর্শবাদীদের মূল বক্তব্য


v) রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক ভূমিকার স্বীকৃতি: 

আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কল্পনা করে। নাগরিকদের শিক্ষা, নৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্র শুধু শাসন করবে না, বরং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে—এটাই এই তত্ত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য


আদর্শবাদী তত্ত্বের সমালোচনা;

আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে একটি নৈতিক ও আদর্শিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় এ তত্ত্ব বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপুর্ণ কিছু সমালোচনা নীচে উল্লেখ করা হল-


i) রাষ্ট্রকে অতিমাত্রায় মহিমান্বিত করা হয়েছে: 

    আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে নৈতিকতার সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে দেখায়, ফলে রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি উপেক্ষিত হয়। বাস্তবে রাষ্ট্র অনেক সময় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে। কিন্তু এই তত্ত্ব রাষ্ট্রকে আদর্শিক রূপে উপস্থাপন করায় তার বাস্তব দোষত্রুটি যথাযথভাবে বিশ্লেষিত হয় না

 

ii) ব্যক্তিস্বাধীনতার গুরুত্ব হ্রাস পায়: 

এই তত্ত্বে রাষ্ট্রের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে ব্যক্তির স্বাধীনতা গৌণ হয়ে পড়ে। ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের অধীন হিসেবে দেখানো হয়, যা গণতান্ত্রিক চিন্তার পরিপন্থী। এতে রাষ্ট্র চাইলে ব্যক্তিস্বাধীনতা সীমিত করলেও তা নৈতিক বলে বৈধতা পেতে পারে


iii) বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপেক্ষিত: 

আদর্শবাদী তত্ত্ব নৈতিকতা ও আদর্শের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়, ফলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, স্বার্থসংঘাত ও রাজনৈতিক বাস্তবতা উপেক্ষিত হয়। বাস্তবে রাষ্ট্র সবসময় ন্যায়পরায়ণ হয় না। এই বাস্তবতা অনুধাবনে তত্ত্বটি ব্যর্থ হওয়ায় একে অনেক সময় কল্পনাপ্রসূত বলা হয়


iv) স্বৈরতন্ত্রের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে: 

    রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ নৈতিক কর্তৃত্ব প্রদান করার ফলে এই তত্ত্ব স্বৈরশাসনের পথ প্রশস্ত করতে পারে। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সিদ্ধান্তকে নৈতিক বলে ঘোষণা করে জনগণের মতামত দমন করতে পারে। ইতিহাসে অনেক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এই ধারণার অপব্যবহার করেছে


v) আধুনিক বহুত্ববাদী সমাজের সঙ্গে অসামঞ্জস্য: 

    আধুনিক সমাজে বিভিন্ন মত, সংস্কৃতি ও স্বার্থের সহাবস্থান দেখা যায়। আদর্শবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রকে একক নৈতিক সত্তা হিসেবে দেখে এই বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে আধুনিক গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থার বাস্তব রূপ ব্যাখ্যা করতে এটি ব্যর্থ হয়


উপসংহার;

পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্র সম্পর্কে আদর্শবাদী তত্ত্ব রাজনৈতিক দর্শনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এটি রাষ্ট্রকে একটি নৈতিক ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়েছে এবং মানুষের নৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে রাষ্ট্রের ভূমিকার গভীর সম্পর্ক তুলে ধরেছে



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code