মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি | Marxist Approach to Politics | Political Science Notes

Ad Code

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি | Marxist Approach to Politics | Political Science Notes

University of Burdwan

1st Semester Minor Political Science Notes

Paper: Political Theory

রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে। BA Political Science পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলা নোটস।, রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি, Marxist Approach to Politics, Political Science Notes Bengali, মার্কসীয় রাজনৈতিক চিন্তা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বাংলা নোটস, Karl Marx Political Theory, Marxism in Political Science, BA Political Science Notes, রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করো, Marxist theory of politics in Bengali, Political Science Semester Notes, Marxism explanation in Bengali, রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী?, মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির মূল কথা কী?, মার্কসের মতে রাষ্ট্র কী?, মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রধান সমালোচনা কী?, 



৫) রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করো
উত্তর;

ভূমিকা;

রাজনীতি চর্চার ইতিহাসে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি একটি বৈপ্লবিক ও প্রভাবশালী চিন্তাধারা। কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের চিন্তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতিকে কেবল রাষ্ট্র বা সরকারকেন্দ্রিক বিষয় হিসেবে নয়, বরং সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো ও শ্রেণি সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির মূল বক্তব্য;

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির মূল বক্তব্য হলো—রাজনীতি কোনো স্বতন্ত্র বা নিরপেক্ষ ক্ষেত্র নয়; বরং এটি সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কার্ল মার্কসের মতে, উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদন সম্পর্ক সমাজের ভিত্তি গঠন করে এবং এর ওপরই রাষ্ট্র, আইন, রাজনীতি ও আদর্শের মতো উপরিকাঠামো গড়ে ওঠে। রাষ্ট্র মূলত শাসক শ্রেণির হাতিয়ার, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও শ্রেণি আধিপত্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। রাজনীতি তাই শ্রেণি স্বার্থের প্রতিফলন এবং ইতিহাস মূলত শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সমাজ পরিবর্তিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত শোষণহীন, শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্য;

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতিকে একটি অর্থনৈতিক ও শ্রেণিভিত্তিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্লেষণ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের অন্তর্নিহিত শোষণব্যবস্থা, ক্ষমতার উৎস এবং রাষ্ট্রের প্রকৃত ভূমিকা উন্মোচন করা। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-


i) অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদ: 

মার্কসীয় তত্ত্বে অর্থনৈতিক কাঠামোকে সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। উৎপাদন ব্যবস্থা ও সম্পদের মালিকানাই রাজনীতি, আইন ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থনীতি পরিবর্তিত হলে রাজনৈতিক কাঠামোও পরিবর্তিত হয়। তাই রাজনীতি স্বাধীন কোনো ক্ষেত্র নয়, বরং অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন


ii) শ্রেণিভিত্তিক রাজনীতির ধারণা: 

এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী রাজনীতি মূলত শ্রেণিস্বার্থের দ্বন্দ্ব। সমাজ শোষক ও শোষিত—এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। ফলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণের নয়, বরং ক্ষমতাবান শ্রেণির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়


iii) রাষ্ট্রকে দমনমূলক যন্ত্র হিসেবে দেখা: 

মার্কস রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকার করেননি। তাঁর মতে রাষ্ট্র হলো শাসক শ্রেণির দমনমূলক যন্ত্র, যা পুলিশ, আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে শ্রমজীবী শ্রেণিকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য বিদ্যমান শোষণব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা এবং ক্ষমতাসীন শ্রেণির আধিপত্য বজায় রাখা


iv) শ্রেণি সংগ্রামের গুরুত্ব: 

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে শ্রেণি সংগ্রামই ইতিহাসের চালিকাশক্তি। সমাজের প্রতিটি পরিবর্তন শাসক ও শোষিত শ্রেণির দ্বন্দ্বের ফল। রাজনৈতিক পরিবর্তন বা বিপ্লব ঘটে এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই। শান্তিপূর্ণ সংস্কারের চেয়ে বিপ্লবকেই সমাজ পরিবর্তনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়


v) বিপ্লব ও শ্রেণিহীন সমাজের ধারণা: 

মার্কসীয় রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র এবং পরে সাম্যবাদ গড়ে উঠবে। তখন রাষ্ট্রের প্রয়োজন থাকবে না এবং মানুষ শোষণমুক্ত, সমানাধিকারভিত্তিক সমাজে বসবাস করবে—এটাই মার্কসীয় আদর্শের মূল লক্ষ্য


মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা;

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতি বিশ্লেষণে এক যুগান্তকারী অবদান রাখলেও এটি বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ন কিছু সমালোচনা নীচে উল্লেখ করা হল-


i) অতিরিক্ত অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদ: 

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে প্রধানত অর্থনৈতিক কাঠামোর ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করে। ফলে ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবাদ ও আদর্শের মতো উপাদানগুলোর স্বতন্ত্র ভূমিকা উপেক্ষিত হয়। বাস্তবে রাজনীতি কেবল অর্থনীতির দ্বারা পরিচালিত নয়; বহু অার্থ-সামাজিক ও মানসিক উপাদানও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে


ii) রাষ্ট্রের ভূমিকা সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা: 

মার্কস রাষ্ট্রকে কেবল শাসক শ্রেণির দমনযন্ত্র হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র দরিদ্র কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে রাষ্ট্র সবসময় শোষণের হাতিয়ার—এই ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে সমালোচকরা মনে করেন


iii) বিপ্লব তত্ত্বের বাস্তব ব্যর্থতা: 

মার্কস বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের কথা বললেও ইতিহাসে দেখা যায় অধিকাংশ দেশে পরিবর্তন এসেছে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে শ্রমিক বিপ্লব ঘটেনি। ফলে তাঁর বিপ্লব তত্ত্বকে অতিরঞ্জিত ও বাস্তবতাবিবর্জিত বলে সমালোচনা করা হয়


iv) ব্যক্তিস্বাধীনতার অবমূল্যায়ন: 

মার্কসীয় তত্ত্বে শ্রেণি ও সমষ্টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার যথাযথভাবে গুরুত্ব পায় না। বাস্তবে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বিরোধিতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত হয়েছে, যা এই তত্ত্বের একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত


v) ঐতিহাসিক পূর্বাভাসের ব্যর্থতা: 

মার্কস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে পুঁজিবাদ ধ্বংস হয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্র বিলুপ্ত হবে। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাদ আজও টিকে আছে এবং অনেক দেশে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই ভুল পূর্বাভাস মার্কসীয় তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে


উপসংহার;

পরিশেষে বলা যায়, রাজনীতি চর্চায় মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি একটি শক্তিশালী ও সমালোচনামূলক তত্ত্ব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি রাজনীতির আড়ালে থাকা অর্থনৈতিক স্বার্থ, শ্রেণি শোষণ ও ক্ষমতার প্রকৃত রূপ উন্মোচন করেছে। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও আধুনিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণে মার্কসীয় চিন্তাধারা আজও প্রাসঙ্গিক। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code